করিমগঞ্জ নিউজ :
গুনধর

নিকলী-করিমগঞ্জ সড়কের বেহাল অবস্থা

উদ্বোধনের পর পৌনে তিন বছর যেতে না যেতেই হাওরবাসীর বহুল প্রত্যাশিত কিশোরগঞ্জের নিকলী-করিমগঞ্জ সড়কটির কয়েক জায়গায় বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া সড়ক ঠিক রাখতে দুই পাশে দেওয়া পাটাতনগুলোও ধসে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। সড়কে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারসহ অনিয়ম আর গাফিলতিতে এমনটি হয়েছে বলে স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করেছেন।

জানা যায়, নিকলী ও করিমগঞ্জ উপজেলাকে সংযোগ করা হাওরের মাঝখান দিয়ে বয়ে যাওয়া সড়কটির নামকরণ করা হয় ‘রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ সড়ক’। সড়কটি জেলার হাওর অধ্যুষিত নিকলী ও করিমগঞ্জ উপজেলার অন্তত ২০ গ্রামের মানুষের চলাচলকে সহজ করেছে। নিকলী সদর থেকে করিমগঞ্জ মরিচখালী পর্যন্ত সড়কটি প্রায় ১১ কিলোমিটার লম্বা ও ২৪ ফুট প্রস্থ। হাওর এলাকার মানুষের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে জমি অধিগ্রহণ করে হাওরের ভেতর দিয়ে ২০১৬ সালে স্থানীয় সরকার অধিদপ্তরের মাধ্যমে সড়কটি নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এতে ৭৫ কোটি ৬৯ লাখ ৩ হাজার ১৮২ টাকা ব্যয় হয়। সড়কটি নির্মাণ করতে চার বছর লাগে। ২০২০ সালের শুরুর দিকে এটি উদ্বোধন করা হয়।

সড়কটি নির্মাণের পর থেকে এখানকার মানুষ অল্প সময়ে কম খরচে জেলা শহরে যাতায়াত করতে পারছেন। এ ছাড়া সড়কটি হাওরের ভেতর দিয়ে যাওয়ায় এটি বর্ষাকালে পর্যটকদেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করে। প্রতিদিন এ সড়ক দিয়ে কিশোরগঞ্জ-করিমগঞ্জ ও নিকলী উপজেলা ছাড়াও বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসা লাখো মানুষ যাতায়াত করে।

গত মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা যায়, সড়কটির ৩টি সেতুর পাশের জায়গায় বড় বড় গর্তের পাশাপাশি আরও অন্তত ১০ থেকে ১২টি জায়গায় সড়কের কিনারার পাঠাতন সরে গিয়ে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল লতিফ, কামরুল ইসলামসহ অন্তত ১০ জন অভিযোগ করে বলেন, সড়কটি নির্মাণের আড়াই বছরের মাথায় এর কয়েকটি সেতুর কাছে ভেঙে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সড়কের নিচ থেকে মাটি সরে গিয়েও গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া বর্ষায় হাওরের পানির ঢেউয়ে সড়কটি যেন ভেঙে না যায়, তার জন্য সড়কের দুই পাশে দেওয়া ব্লকগুলো সরে যাওয়ায় এটি এখন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সড়কে গর্ত থাকায় রাতের বেলায় মাঝেমধ্যে ছোট–বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। সেই সঙ্গে সড়কের নিচ থেকে মাটি সরে যাওয়ায় এর বিভিন্ন জায়গায় দেবে গিয়ে উঁচু–নিচুর সৃষ্টি হয়েছে অনেক আগেই। তাঁরা জানান, সড়কটি নির্মাণে প্রত্যন্ত হাওরাঞ্চলের মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন হলেও বর্তমানে এই করুণ দশা সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। সড়কটিতে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার ও অনিয়মের কারণেই এমনটি হয়েছে বলে তাঁরা অভিযোগ করেছেন।

স্থানীয় কারপাশার ইউপি চেয়ারম্যান তাকি আমান খান বলেন, এটি নিকলী ও করিমগঞ্জ হাওরবাসীর স্বপ্নের একটি সড়ক। দুই উপজেলার কয়েক হাজার মানুষসহ শত শত গাড়ি এ সড়ক দিয়ে চলাচল করে। সড়কটি নির্মাণ হওয়ায় এ অঞ্চলের কয়েক গ্রামের মানুষ খুব সহজেই দ্রুত সময়ে জেলা শহরে আসা–যাওয়া করতে পারে। তবে পরিতাপের বিষয়, রাষ্ট্রপতির নামে নির্মাণ হওয়া সড়কটির নির্মাণসংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনিয়ম আর নিম্নমানের কাজের জন্য অল্প দিনের মধ্যে সড়কটি বেহাল হয়।

কিশোরগঞ্জ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আমিরুল ইসলাম বলেন, হাওরে বন্যার কারণে সড়কটির কিছু অংশ ভেঙে গেছে। তবে দ্রুততম সময়ে সড়কটি সংস্কারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।