করিমগঞ্জ নিউজ :
গুনধর

নারীকে পিটিয়ে হত্যায় আওয়ামী লীগ নেতা গ্রেপ্তার

কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জে দাদনের টাকার জন্য মোছা. বিলকিস (৩৭) নামের এক নারী শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যার মামলার আসামি মো. নূরে  আলমকে (২৮) গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। গতকাল রোববার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে ঢাকার বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেট এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। নূরে আলম উপজেলার গুণধর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি।

আজ সোমবার র‍্যাব-১৪ কিশোরগঞ্জ ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার এম এম সবুজ রানা স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গ্রেপ্তারের তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে র‍্যাব জানায়, ৬ আগস্ট দুপুরে করিমগঞ্জ উপজেলার গুণধর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. নূরে আলম দাদনের টাকার জন্য প্রকাশ্যে রাস্তায় মোছা. বিলকিস নামের এক ইটখলা শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যা করেন। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রচার হলে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় নিহত বিলকিস বেগমের ছেলে মো. মাসুম বাদী হয়ে করিমগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলার আসামি আওয়ামী লীগ নেতা নূরে আলম গ্রেপ্তার এড়াতে পালিয়ে যান। পরে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ঢাকার বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেট এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

কোম্পানি কমান্ডার এম এম সবুজ রানা বলেন, আসামি মো. নূরে আলমের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আজ থানা-পুলিশের হাতে হস্তান্তর করা হয়েছে।

নূরে আলম গুণধর ইউনিয়নের ইন্দাচুল্লি গ্রামের বাসিন্দা। শ্রমিকদের সরদার হিসেবে বিভিন্ন ইটখলায় শ্রমিক সরবরাহ করেন। ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নূরে আলম ও তাঁর বড় ভাই সুজন মিয়াসহ (৩৫) অজ্ঞাতনামা আরও তিন থেকে চারজনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে সুজন মিয়াকে ঘটনার দিন রাতেই স্থানীয় মরিচখালী বাজার থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ঘটনার পরপরই নূরে আলম আত্মগোপন করে ছিলেন।

পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বিলকিসসহ তাঁর পরিবারের সবাই চট্টগ্রামের একটি ইটখলায় কাজ করতেন। বর্ষাকালে ইটখলা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাঁরা সম্প্রতি এলাকায় ফিরে আসেন। বিলকিসের স্বামী আবদুল করিমের কাছে দাদনের টাকা পেতেন সুজন। এ নিয়ে সুজন ও নূরে আলম বিলকিসের বাড়িতে যান। তখন বিলকিসের স্বামী আবদুল করিম বাড়িতে ছিলেন না। পাওনা টাকা নিয়ে বিলকিসের সঙ্গে নূরে আলমের কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে নূরে আলম ক্ষিপ্ত হয়ে চুলের মুঠি ধরে বিলকিসকে টেনেহিঁচড়ে বাড়ির সামনের রাস্তায় নিয়ে যান। তাঁকে কিল–ঘুষি, লাথিসহ লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটান। মারধরের একপর্যায়ে নূরে আলম বিলকিসের গলা চেপে ধরলে ওই নারী অচেতন হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।

বিলকিসের ছেলে মো. মাসুম বলেন, মারধরের কারণে মা অচেতন হয়ে গেলে তিনি তাঁকে স্থানীয় একটি ওষুধের দোকানে নিয়ে যান। সেখান থেকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু হাসপাতালে নেওয়ার আগেই বিলকিস মারা যান। মাসুম বলেন, মাকে মারার সময় নূরে আলমের হাতে-পায়ে ধরেছেন, বলেছেন টাকা দিয়ে দেবেন, কিন্তু তিনি শোনেননি। সবাইকে পিটিয়েছেন। প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে তাঁদের বাঁচাতে কেউ এগিয়ে আসেননি।

| করিমগঞ্জ নিউজ |