করিমগঞ্জ নিউজ :
গুনধর

খয়রত-সুলতান নগর সড়কে পানি ও কাদায় বেহাল অবস্থা

করিমগঞ্জ উপজেলার খয়রত-সুলতান নগর সড়কের কাজ দুই সপ্তাহ ধরে বন্ধ। গত শনিবার রাত থেকে গতকাল রোববার পর্যন্ত এলাকায় বৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় কাদাপানিতে ভরে গেছে সড়কটি। এতে ১০ হাজার মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছেন।

গতকাল সকাল নয়টার দিকে গিয়ে দেখা গেছে, পানি ও কাদায় একাকার সড়ক। লোকজন এতে অপরকে ধরাধরি করে হাঁটছেন। তাঁরা হাতে নিজেদের স্যান্ডেল ধরে রেখেছেন। সড়কে চলতে গিয়ে ইজিবাইক আটকে গেছে। চালক সেটি ঠেলে নিয়ে যাচ্ছেন। সড়কের পাশে কিছু এলাকায় খোয়া ফেলা। একজন স্বেচ্ছায় কোদাল নিয়ে কাদা তুলে সড়কের কিছুটা অংশ পরিষ্কার করে দিচ্ছেন।

অটোরিকশাচালক জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা দিন আনি দিন খাই। এক দিন অটো না নিয়ে বের হলে এদিন পরিবারের সবাইকে নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে। সে জন্য বাধ্য হয়ে অটোরিকশা নিয়ে বের হয়েছি। এখন কাদাপানিতে বিপাকে পড়েছি।’

কাদাপানি মাড়িয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় গোলাপ মিয়া বলেন, বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা সবারই জানা ছিল। সে অনুযায়ী কাজটি করে ফেললে তাঁদের এ দুর্ভোগ পোহাতে হতো না।

স্থানীয় লোকজন বলেন, কাদার কারণে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীসহ খয়রত ও সুলতান নগরের দুই গ্রামের অন্তত ১০ হাজার মানুষ যাতায়াত করতে গিয়ে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। বেহাল সড়কের কথা শুনে অনেকে জরুরি কাজ ছাড়া বের হচ্ছেন না।

খয়রত গ্রামের ভ্যানচালক নবী হোসেন বলেন, সড়কের দুরবস্থার কারণে ভ্যান নিয়ে বের হতে পারছেন না। তাঁর রোজগারও বন্ধ।

এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কাজের শুরুতে আগের ইট তুলে বেড কেটে মাটি মিশ্রিত নিম্নমানের ভিটি বালু দেওয়া হচ্ছিল। এ নিয়ে স্থানীয় ব্যক্তিদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। তাই তাঁরা এ বিষয়ে উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) প্রকৌশলীর কাছে মৌখিকভাবে অভিযোগ জানান। পরে এলজিইডির প্রকৌশলী ঠিকাদারকে নিম্নমানের বালু ব্যবহার না করে ভালো বালু ব্যবহারের নির্দেশ দেন। এর পর থেকে দুই সপ্তাহ ধরে কাজ বন্ধ করে ঠিকাদার লাপাত্তা। এদিকে রাস্তা খুঁড়ে ফেলে যাওয়ায় দুই দিন ধরে বৃষ্টির পানি আটকে রাস্তা এখন অনেকটা খালের মতো হয়ে গেছে। যে কারণে আশপাশের কয়েক হাজার মানুষ এখন অনেকটাই ঘরবন্দী।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. আল–আমিন জানান, এ সড়কে আগে শুধু ইট বসানো ছিল। তখন রাস্তায় ভাঙাচোরা ও গর্তের কারণে তাঁরা ভোগান্তি পোহাতেন। স্থানীয় লোকজন দীর্ঘদিন ধরে এ সড়ক সংস্কার করার আবেদন জানাচ্ছিলেন। কাজ শুরু হওয়ায় তাঁরা অনেক খুশি হয়েছিলেন। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, আগের ভাঙা রাস্তাই ভালো ছিল।

উরদিঘী বাজার বণিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মঈন উদ্দিন বলেন, শুরুতে ঠিকাদার নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে কাজ করতে চেয়েছিলেন। তিনিই উপজেলা প্রকৌশলীকে বিষয়টি মুঠোফোনে জানিয়েছিলেন। এর পর থেকে হাজারো মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলে ঠিকাদার লাপাত্তা। তাঁরা কাজ বন্ধ রাখতে বলেননি। শুধু সঠিকভাবে কাজটা যাতে হয় সে জন্য কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলেন।

এলজিইডি সূত্রে জানা যায়, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রায় এক কিলোমিটার দীর্ঘ ও ১০ ফুট প্রস্থ খয়রত-সুলতান নগর সড়কটির পিচঢালাই ও রাস্তার উন্নয়নকাজের উদ্বোধন করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য মো. মুজিবুল হক। কিশোরগঞ্জ সদরের মুকশেদপুর এলাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স ইভা এন্টারপ্রাইজ কাজটি পায়। আগামী জুন মাসে কাজটি শেষ করার কথা।

মেসার্স ইভা এন্টারপ্রাইজ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক দীপক। পুরো নাম জানাতে পারেননি উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী। দীপকের মুঠোফোন নম্বরও বন্ধ পাওয়া যায়।

এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী মো. বখতিয়ার হোসেন গতকাল দুপুরে করিমগঞ্জ নিউজ’কে বলেন, আর এক সপ্তাহ দেখবেন, এর মধ্যে কাজ না শুরু করলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বাতিল করে দেওয়া হবে।